স্কুল-কলেজ সরকারি করা হলেও এর সুবিধা পাচ্ছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুই-তিন বছরেও শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ হয়নি। আর ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টিউশনসহ অন্য ফি নেয়া হচ্ছে আগের হারেই।
ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, পদ সৃজনের নামে নিয়োগের মূল বিজ্ঞপ্তি, এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠি এবং স্মারক বই অনুসন্ধানের নামে হয়রানি চলছে। অনেক ক্ষেত্রে একাধিকবার পরিদর্শন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠান।
এ ক্ষেত্রে একই সংস্থা তার আগের টিমের পরিদর্শন প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এই প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ চলছে। পদ সৃজন বা শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ না হওয়ায় বেসরকারি আমলের মতো এখনও বেতন হিসেবে এমপিওই তাদের ভরসা।
অপরদিকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এখনও ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি টিউশন ফি নিচ্ছে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ। এছাড়া উন্নয়ন ফি, সেশন ফি, মাসিক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই অর্থ আগের মতোই লুট করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, জনবলের চাকরি আত্তীকরণের নানা ধাপ আছে। প্রথমত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে প্রস্তাব আসতে হয়। এরপর সেটি মন্ত্রণালয়ে যাচাই শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখানকার কাজ শেষ হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুই ভাগে কাজ হয়।
প্রথম শ্রেণীর চাকরি হলে সেটা অনুমোদনে সচিব কমিটির বৈঠক এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। এসব প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে। তবে কাজ যাতে দ্রুত হয় সে জন্য মন্ত্রণালয় এবং মাউশির সংশ্লিষ্ট শাখায় অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। যখন সেটি নির্ভুলভাবে আসছে তখন সেটি অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে। তিনি এ কাজে তথ্য দিয়ে শিক্ষকদেরও সহায়তা অনুরোধ করেন। পাশাপাশি বলেন, যারা এখন সরকারি বেতন পাচ্ছেন না এমপিও পাচ্ছেন এক সময়ে তাদের বেতন সমন্বয় করা হবে। সুতরাং তারা চাকরি বাবদ পয়সা কম পাচ্ছেন না। তাই কোনো অজুহাতেই বেসরকারি আমলের মতো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাবে না। বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাউশির কলেজ শাখায় এই কাজের জন্য তিনজন সহকারী পরিচালক ছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও ৯ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাত্র ১০টি কলেজের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এই শাখা থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসের ১৫ এবং ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেয়া আছে। তবে কাজ শেষ হলে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
স্কুল সরকারিকরণে কাজ করেন মাউশির সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম টুকু। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বিলম্ব কেবল কাগজপত্র যাচাইয়ে হয়ে থাকে। তবে মন্ত্রণালয় এই কাজে খুবই তৎপর। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
কলেজ সরকারিকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক একেএম মাসুদ বলেন, আসলে শিক্ষকের চাকরি আত্তীকরণের কাজে জটিলতার শেষ নেই। এ কাজে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে সহায়তা না করলে বিলম্ব হবেই। তিনি বলেন, আমরা প্রতি মাসে অন্তত ৩-৪ বার চূড়ান্ত ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।
উল্লেখ্য, প্রতি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারি করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ২৯৯ কলেজ ও ৩২৫টি স্কুল সরকারি করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কলেজে ১২ হাজার এবং স্কুলে প্রায় আট হাজার শিক্ষক আছেন। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। কিন্তু কাজের গতি খুবই ধীর। ৩ বছরেও সংশ্লিষ্টরা সরকারি করার কাজ শেষ করতে পারেনি। বারবার পরিদর্শন ও নথিপত্র চাওয়ার মাধ্যমে কাজে বিলম্ব করা হচ্ছে। কখনও নিয়োগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির চিঠি চান কর্মকর্তারা। আবার কখনও মূল বিজ্ঞপ্তি বা স্মারক বই চান। এভাবে তাদের অজুহাতের শেষ নেই। কিন্তু অধ্যক্ষ পরিবর্তন হয়েছে। সবাই কাগজ সংরক্ষণ করেনি। এমন অবস্থায় অনেকেই বিপাকে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান সরকারি হলেও আমরা এখনও বেসরকারিই রয়ে গেছি। জানা গেছে, সব কলেজে সমন্বিত পদ সৃজন করার অংশ হিসেবে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে সভা করে।
পাঠকের মতামত: